ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস আজ

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস আজ
বুধবার, ২৪ আগস্ট ২০২২



---

দীর্ঘ ২৬ বছর আগে ১৯৯৫ সালের এ দিনে (২৪ আগস্ট) দিনাজপুরে কিশোরী ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এতে জড়িত ছিলেন কয়েকজন বিপথগামী পুলিশ সদস্য।

ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। নিহত হন ৭ জন। তারপর থেকে দিনাজপুরে দিনটি ‘ইয়াসমিন হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এটি সারাদেশে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবেও পালন করা হয়।

‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে দিনাজপুরের বিভিন্ন সংগঠন আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত, দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, এই আন্দোলন সংগ্রামে আমার নিজেকে কখনো একা মনে হয়নি, দেশবাসীকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।

তৎকালীন আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জলশীল গোপাল বলেন, ইয়াসমিন হত্যা আন্দোলনের যে লক্ষ্য ছিল তা আজও আমরা অর্জিত করতে পারিনি। নারীরা এখনো নিরাপদ নয়। আজও নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে।

ঘটেছিল সেদিন:

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। দীর্ঘদিন পর মাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ি ফিরছিল ইয়াসমিন। দিনাজপুরের কোচে না উঠতে পেরে পঞ্চগড়গামী কোচে ওঠেন তিনি। কোচের লোকজন তাকে দিনাজপুরের দশমাইলে নামিয়ে দিয়ে সেখানকার এক চায়ের দোকানে বসতে বলেন। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইয়াসমিনকে দিনাজপুর শহরে মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য খুব ভোরে পুলিশের হাতে তুলে দেন এলাকাবাসী।

পথে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কিশোরী ইয়াসমিনকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর তারা ইয়াসমিনের মরদেহ দিনাজপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর সদর উপজেলার ব্র্যাক অফিসের পাশে রাস্তায় ফেলে চলে যান।

পরদিন ঘটনা জানাজানি হলে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা দিনাজপুর শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে উল্টো ইয়াসমিনকে ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দিনাজপুরের প্রতিবাদী জনতা। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

২৬ আগস্ট রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ আবারও তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। ওইসময় হাজারও জনতা কোতোয়ালি থানার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে। ২৭ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা একে একে রাজপথে নেমে এসে সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলি ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে বিশাল মিছিল বের করেন।

সে সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। ফলে সামু, কাদের ও সিরাজসহ নাম না জানা ৭ জন নিহত হন। আহত হয় ৩০০’র বেশি মানুষ।

পরে বিক্ষুব্ধ জনগণ শহরের ৪ পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিক্ষোভের এ সুযোগ নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ও দুষ্কৃতকারীরা দিনাজপুর প্রেসক্লাব, দৈনিক উত্তরবাংলাসহ স্থানীয় ৫ পত্রিকা অফিসে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিনাজপুর শহরে কারফিউ জারি করা হয়। টানা ৩ দিন চলে কারফিউ।

তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল মোতালেবসহ শহরের গোটা পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত করা হলে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় তৎকালীন বিডিআর বাহিনী। পরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক জব্বার ফারুককেও প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন দিনাজপুর সিআইডি জোনের সিনিয়র এএসপি আফজাল হোসেন বাদী হয়ে পুলিশের এএসআই ময়নুল ইসলাম, কনস্টেবল আবদুস সাত্তার ও পিকআপভ্যান চালক কনস্টেবল অমৃত লালকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

মামলাটি পুলিশের সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান তদন্ত করে এএসআই ময়নুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার, পিকআপ ভ্যান চালক কনস্টেবল অমৃত লাল, তৎকালীন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল মোতালেব, কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি এসআই মাহতাব উদ্দীন, এএসআই স্বপন কুমার, এসআই মতিয়ার রহমান, এএসআই জাহাঙ্গীর আলম ও ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার মহসিনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

নিরাপত্তার কারণে ইয়াসমিন হত্যা মামলাটি দিনাজপুর থেকে রংপুরে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৯৭ সালে রংপুর বিশেষ আদালতে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই ময়নুল ইসলাম, পুলিশ কনস্টেবল আবদুস সাত্তার ও পিকআপচালক অমৃত লাল বর্মণের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

৮ বছর পর অর্থাৎ ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

এত বছর পার হলেও ইয়াসমিন, সামু, সিরাজ, কাদেরসহ নিহতের পরিবার সরকারিভাবে তেমন সুযোগ-সুবিধা পায়নি। নিহত সামু, সিরাজ ও কাদেরের স্ত্রীদের তৎকালীন বিএনপি সরকার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩২:৪৩   ১৬১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


ঝিনাইদহে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ১৫
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন অনু কাপুর
নোয়াখালীতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় চালু হচ্ছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নাসিরের ঢাকা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৫
বাজারে আসছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজের ফোন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু
রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সুর মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে - খাদ্যমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা

আর্কাইভ