সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচ ব্যবস্থায় সুফল

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচ ব্যবস্থায় সুফল
মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০২২



---

রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিকহারে বৃষ্টি কমে যাওয়া, নদী-জলাধারসহ পানির বিভিন্ন উৎসগুলোর পরিচর্চা না থাকায় কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের।

ফলে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের সেচযন্ত্র। যার ৯০ শতাংশই ডিজেল ও বিদ্যুৎ নির্ভর। তবে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে কৃষকের। বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে কৃষিতে খরচ কমাতে সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে রংপুরের বদরগঞ্জের কৃষকরা।

বোরো সেচ নির্ভর হলেও এবার আমনেও জমি তৈরি থেকে শুরু করে রোপণ পুরোটাই করতে হয়েছে সেচের মাধ্যমে। যদিও আমনবিনা সেচের ধান, তবে এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টি না থাকায় ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহারে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। আর এতেই বেড়েছে উৎপাদন খরচ। চলতি আমন মৌসুমে শুধু সেচেই উত্তরাঞ্চলে কৃষকদের বাড়তি খরচ ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

বর্তমানে দেশে কৃষিতে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ১৬ লাখ ডিজেলচালিত সেচ পাম্প। যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে শুধু ধান চাষে সাড়ে তিন লাখ বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে ৫৫ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ো হচ্ছে। যেখানে বিদ্যু খরচ হয় ২০০০ থেকে ২২০০ মেগাওয়াট।

সংকট মোকাবিলায় বেড়েছে ডিজেলের দাম। জ্বালানি সাশ্রয়ে চলছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। এতে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এই বাস্তবতায় রংপুর অঞ্চলের কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ ব্যবস্থায়।

রংপুরের বদরগঞ্চ উপজেলার লোহানী ইউনিয়নের সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন সেচ সুবিধায় পাওয়ায় এখানকার আমন ধানের জমিগুলো হয়েছে সবুজে।

গত ৭ বছর ধরে এই ইউনিয়টিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের গড়ে উঠেছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ প্রকল্প। একেকটি সৌর প্যানেল থেকে সেচ দেয়া হচ্ছে ১০০ বিঘা জমিতে। কৃষকরা জানান, এই ব্যবস্থায় সেচের জন্য তাদেরকে বিদ্যুৎ কিংবা ডিজেলের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় না। ফলে সেচ দেয় যার যার প্রয়োজন মতো ।

সৌর বিদ্যুতের সুফলভোগী বৃষক তাহাররত আলী জানান, জমিতে যখন সেচের দরকার হয় তখন দেই। বিদ্যুতের কোনো দরকার হয় না। আমরা অনেক সুবিধা পাচ্ছি।

কৃষক রহমত আলী জানান, আমার বয়স এখন ৭৫ বছর। এই সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে গত ৫ বছর থেকে আমি আমার জমিতে সেচ দিচ্ছি। যখন জমিতে পানির দরকার হয় তখনেই পানি দিচ্ছি। এতে পানির অপচয় কম হয়। আমার উৎপাদন খরচ আগে যা ছিল এখনো তাই আছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজেল ও বিদ্যুৎ নির্ভর সেচযন্ত্রের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করা গেলে প্রতি বছর দেশে ১৭ হাজার টনেরও বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানো সম্ভব। অন্যদিকে এই পদ্ধতি ব্যবহারে সেচে ১.৮৮ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমবে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মহুয়া শবনম জানান, শুধু ইরিগেশনকে ফোকাস না করে আমরা যদি কৃষি ক্ষেত্রে যতো পদ্ধতি আছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করি তা হলে দেশে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ব্যবহার কমে আসবে। বিদ্যুতের সমাধানে সোলার প্লান একটি ভালো উপায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র স্থাপনে কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। আমরা যদি সারা দেশে সোলার প্লান স্থাপন করতে পারি তা হলে আমরা সেচ খরচ অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো। সোলার একবার স্থাপন করতে পারলে আর তেমন কোন খরচ লাগবে না। এ ব্যাপারে কৃষকদের যেকোন বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করতে পারবো।

কৃষি অর্থনীতি গতিশীল এবং জ্বালানির ব্যবহার কমাতে ২০১০ সালে সরকার সারাদেশে ৫০ হাজার সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে গত এক যুগে স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২২৩টি সেচযন্ত্র। যা দিয়ে সেচ দেয়া হচ্ছে ২৮ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৪:৩৩   ১০২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


ঝিনাইদহে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ১৫
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন অনু কাপুর
নোয়াখালীতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় চালু হচ্ছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নাসিরের ঢাকা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৫
বাজারে আসছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজের ফোন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু
রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সুর মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে - খাদ্যমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা

আর্কাইভ