বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশিটের কপি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চার্জশিট পড়ে দেখেশুনে এবার মুখ খুলবেন।
আজ শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে আজ সপ্তম দফায় কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ অভিযুক্তদের আদালতে আনা হয়। আর দুপুর ১২টা নাগাদ বিচারকের এজলাসে তোলা হয়।
আদালত দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে সিবিআই স্পেশাল কোর্ট-৩ বিচারক জীবন কুমার সাধু পুনরায় তাদের ২৬ দিনের বিচার বিভাগীয় জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের পি কে হালদার বলেন, ‘এত দিন চার্জশিটের অপেক্ষায় ছিলাম, আজ হাতে পেলাম। দেখেশুনে এবার মুখ খুলব, তার আগে নয়।’
আদালতে শুনানি চলাকালে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, আদালতে ১০০ পাতার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটের কপি অভিযুক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে তদন্ত প্রক্রিয়া চলার মধ্যে নতুন যা তথ্য আসবে তা সম্পূরক চার্জশিট আকারে আদালতে পেশ করা হবে।
এ ছাড়া, মামলাকারীর পক্ষ থেকে পি কে হালদারের মেডিকেল চেকআপের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
তবে আগামী ১০ আগস্ট পি কে হালদারের মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে জমা করতে কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি ইডির গোয়েন্দাদের প্রয়োজনে জেলে গিয়ে আসামিদের জেরা করার অনুমতিও বহাল রাখা হয়।
শুক্রবার শুনানি শেষে আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার পথে পি কে হালদার চার্জশিটের কপি পেয়েছেন বলে জানান। বলেন, ‘হ্যাঁ, চার্জশিট পেয়েছি, বলব।’
আদালত থেকেই আইনজীবীদের মাধ্যমে নিজের ও সহযোগীদের চার্জশিট পড়ে দেখার জন্য এর কপি নিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার (১১ জুলাই) ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে ‘প্রাথমিক চার্জশিট’ জমা দেয় ইডি। ১০০ পাতার ওই চার্জশিটে পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের নাম রয়েছে।
এক্ষেত্রে কেবল ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২’ মামলায় ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আর চার্জশিটে দুটি সংস্থারও নাম রয়েছে।
তবে তদন্তের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে তদন্তে উঠে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের। ইডির দাবি ছিল, এ মামলায় প্রায় ৫৫ জন বাংলাদেশির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
গত মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
গ্রেপ্তারের পর এক বিবৃতিতে ইডি জানিয়েছিল, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করতেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
ইডি জানিয়েছিল, ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার সহায়তায় পি কে হালদার পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক রাজ্যে বিপুল সম্পদ গড়েন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থপাচারের মাধ্যমে ভারতে একাধিক অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে খোঁজ পেয়েছে ইডি।
দেশটির কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা জানিয়েছিল, তারা ইতোমধ্যে পি কে হালদারের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছে। এসব নথিতে প্রাথমিকভাবে ভারতে তার ২০ থেকে ২৫টির মতো বাড়ির মালিকানার তথ্য মিলেছে। এছাড়া অভিযানের সময় পি কে হালদারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থও জব্দ করা হয়।
বিবৃতিতে ইডি বলেছে, বাংলাদেশি নাগরিক পি কে হালদার নিজেকে শিব শঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
বাংলাদেশি এই অর্থপাচারকারী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান এবং আধার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। তার অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।
পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে এই মামলাগুলো করা হয়েছে।
পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। এ তালিকায় সুকুমার ও তার মেয়ে অনিন্দিতাও ছিলেন। পরে এ দুজনসহ ৬২ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৫:৪২ ৭৬ বার পঠিত