আরাফা দিবসের তাৎপর্য

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » আরাফা দিবসের তাৎপর্য
শুক্রবার, ৮ জুলাই ২০২২



---

৯ জিলহজ ইয়াওমে আরাফা বা হাজিদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের দিন। এ দিনটিই মূলত হজের দিন। হজের এ দিনটির জন্যই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। এ দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। আরাফার দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন, আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং গুনাহ থেকে পরিত্রাণের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আরাফা শব্দের অর্থ হলো পরিচিতি। হজরত দ্বাহহাক (রহ.) বলেন, হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-কে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। অবতরণের পর তারা একে অপরকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একদিন দুজন আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ মিলিত হন। এ কারণে ওই স্থানের নাম হলো আরাফাত, আর ওই দিনের নাম হলো আরাফার দিন।

আরাফার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে, ইহুদিরা হজরত ওমর (রা.)-কে বলল, আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের ওপর নাজিল হতো, তবে আমরা সেটিকে ঈদ হিসেবে উদ্‌যাপন করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতাম। হজরত ওমর (রা). বললেন, এটি কখন ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে আর নাজিলের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথায় ছিলেন তা আমি জানি। আল্লাহর শপথ! আমরা সবাই এ সময় আরাফাতে ছিলাম। এ দিন আমাদের জন্য দুটি ঈদ ছিল, প্রথমত সে দিন ছিল জুমাবার যাকে আমরা ঈদ হিসেবে উদ্‌যাপন করি, দ্বিতীয়ত- সে দিন ছিল ইয়াওমে আরাফা, যাকে হাদিসে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে (বুখারি-৪২৫১)।

জুমার দিন ও আরাফার দিন ঈদের দিন। কেননা, হাদিসের মধ্যে এ দুই দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর শোকর যে, জুমা ও আরাফা আমাদের জন্য ঈদের দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলমানও পৃথিবীতে থাকবে ততদিন এ দুটি দিন মুসলমানের জন্য ঈদের দিন হিসেবে গণ্য থাকবে। (আবু দাউদ-২৪১৯)।

আরাফার দিনে আরাফাতের ময়দানে নবীজী ও সাহাবায়ে কেরাম যখন উকুফে আরাফা করছিলেন তখনই আল্লাহ তায়ালা নবীজী (সা.)-এর ওপর কোরআনুল কারিমের সর্বশেষ আয়াত নাজিল করে দ্বীনকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর সেটি হলো সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াত। এ আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য চূড়ান্ত দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ এ আয়াত নাজিলের পর নবীজী (সা.) মাত্র ৮১ দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ২/২৪২)।

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফা দিবসের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীবাসীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার ওইসব বান্দাদেরকে দেখো, যারা বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো চুল নিয়ে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় ও শাস্তির ভয়ে আমার কাছে এসেছে। সুতরাং আরাফা দিবসের চেয়ে বেশি দোজখ থেকে মুক্তির আর কোনো দিন নেই। এই দিনে যে সংখ্যক লোক দোজখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে অন্য কোনো দিন করবে না (সহিহ ইবনে হিব্বান-৩৮৫৩)।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) এক হাদিসে বর্ণনা করে বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন স্বীয় বান্দার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ হজরত নাফে (রা.) বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ ক্ষমা কি সব ঈমানদারের জন্য নাকি শুধু আরাফাবাসীর জন্য? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষমা সব ঈমানদারের জন্য’ (ইবনে রজব হাম্বলি রহ:, লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-৪৭১)।

সহিহ মুসলিম শরিফে আবু কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত- নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফা দিবসে রোজা রাখলে আশা করি আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের এক বছর আগের ও এক বছর পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম-১১৬২)।

তবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত- নবীজী (সা.) আরাফা দিবসে হাজিদের আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন (হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৩/৩৯৭)। অনেকেই হাজি সাহেবদের জন্য এ দিনে রোজা রাখা মাকরূহ বলেছেন। কারণ এ দিন তাদের জিকির, দোয়া ও মোনাজাতে লিপ্ত থাকতে হয় এবং অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। রোজার কারণে যাতে তারা দুর্বল হয়ে না যায় সে কারণে হাজিদের সে দিন রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছেন। তবে যারা সামর্থ্যবান তথা রোজার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না, তাদের জন্য রোজা রাখাই উত্তম।

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হাজিদের জন্য ফরজ। আরাফাতের ময়দানে হাজিরা হাজির হয়ে আল্লাহার রহমতের আশায় থাকেন। সমবেত সবাই ইবাদত-বন্দেগি ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর জিকির, দোয়া, মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। আর আল্লাহতায়ালাও বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি ও কান্নাকাটির বিনিময়ে তাদের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৯:১৮   ৯৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


ঝিনাইদহে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ১৫
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন অনু কাপুর
নোয়াখালীতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় চালু হচ্ছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নাসিরের ঢাকা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৫
বাজারে আসছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজের ফোন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু
রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সুর মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে - খাদ্যমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা

আর্কাইভ