ফিফা ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করে ১৯৯২ সাল থেকে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সময়ের সেরা দল বেছে নেওয়ার জনই এই র্যাঙ্কিং সিস্টেম। স্বভাবতই র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ টিমকেই বিশ্বকাপের হট ফেবারিট ধরা হয়ে থাকে। তবে আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষদল কখনোই বিশ্বকাপের আসরে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। সে হিসেবে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য কাতারে অপেক্ষা করছে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা।
১৯৯২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চালু হয় ফিফা ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের সৌভাগ্য হয়েছে এই র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান অর্জনের। তবে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষে থাকার রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের দখলে।
মজার বিষয়, র্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু হওয়ার পর কখনোই র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেনি। সে হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের সময় র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ব্রাজিলের কপাল পুড়তে যাচ্ছে।
ফিফা র্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করার পর ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে শীর্ষ দল হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে যায় জার্মানি। মে মাসে শীর্ষে থাকা ব্রাজিল বিশ্বকাপের দিন তিনেক আগে নেমে যায় তিন নম্বরে। শীর্ষ স্থান দখল করে বিশ্বকাপ শুরু করে জার্মানি। সে আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে হ্রিস্টো স্টইচকভের বুলগেরিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় লোথার ম্যাথিউসের জার্মানি।
অন্যদিকে, র্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা ব্রাজিল ইতালিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয়। পেলের অবসরের পর এটি ব্রাজিলের প্রথম শিরোপা। ২৪ বছর পর শিরোপা জিতেছিল দুঙ্গা-রোমারিও-বেবেতোর ব্রাজিল।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হিসেবেই বিশ্বকাপে পা রাখে ব্রাজিল। রোনালদো, রিভালদো, কাফুদের দুর্দান্ত ব্রাজিল হট ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করে। দুর্দান্ত খেলে তারা ফাইনালেও পা রাখে, যেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বাগতিক ফ্রান্স। স্বাগতিক হিসেবে বাছাই পর্ব খেলতে না হওয়ায় ফ্রান্সের তখন র্যাঙ্কিংয়ে বেশ অধঃপতন হয়েছে। জিদান-হেনরি-দেশামের দল তখন র্যাঙ্কিংয়ের ১৮ নম্বরে!
ফাইনালে অবশ্য শীর্ষ র্যাঙ্কিং দল ব্রাজিল পাত্তাই পায়নি ফ্রান্সের কাছে। রোনালদোদের দর্শক বানিয়ে জিদানের জাদুকরি পারফরম্যান্সে ৩-০ গোলে ফাইনাল জিতে নেয় ফ্রান্স। প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স।
বিশ্বকাপের পর ২০০২ ইউরোও জিতে নেয় ফ্রান্স। ২০০২ বিশ্বকাপ তারা শুরু করে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হিসেবে। কিন্তু হট ফেবারিট ফ্রান্স নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় নবাগত সেনেগালের কাছে। শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় আগেরবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি আসরে খেলেছে ব্রাজিল। ২০০৬ বিশ্বকাপেও তারা শীর্ষ দল হিসেবেই খেলতে আসে। জার্মানির মাটিতে সে বিশ্বকাপে রোনালদো, কাকা, আদ্রিয়ানো, কাফু, রবার্তো কার্লোসদের নিয়ে দুর্দান্ত দল ব্রাজিলের। কিন্তু এবারও শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় তারা। সে আসরের ফাইনালে খেলে র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বরে থাকা ফ্রান্স ও ১৩ নম্বরে থাকা ইতালি। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ইতালি।
২০১০ বিশ্বকাপের সময়েও র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিল ব্রাজিল। এবারও তারা বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ৪ নম্বরে থাকা নেদারল্যান্ডস তাদের বিদায় করে দিয়ে ফাইনাল খেলে। অরেঞ্জদের প্রতিপক্ষ ছিল দুইয়ে থাকা স্পেন। অতিরিক্ত সময়ে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোলে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন।
২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে বসে বিশ্বকাপ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতে শীর্ষ দল হিসেবে পা রাখে ব্রাজিলের মাটিতে। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বড় হার দিয়ে আসর শুরু করার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা লা ফুরিয়া রোজারা বাদ পড়ে যায় গ্রুপপর্ব থেকেই। আর বিশ্বকাপ জিতে নেয় দুইয়ে থাকা জার্মানি।
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সবশেষ বিশ্বকাপেও বজায় থাকে ধারা। শীর্ষ দল হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে যায় আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। তারকায় ঠাঁসা দলটাও বরণ করে স্পেন ও ফ্রান্সের নিয়তি। বাদ পড়ে যায় গ্রুপপর্ব থেকেই। র্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বরে থাকা ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো পায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ।
কাতার বিশ্বকাপের আগে চলতি বছরের মার্চে বেলজিয়ামের কাছ থেকে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখলে নেয় ব্রাজিল। নেইমার, ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের নিয়ে দারুণ আক্রমণভাগ ব্রাজিলের। মধ্যমাঠ ও রক্ষণেও সমীহ জাগানোর মতো খেলোয়াড় দলটিতে। অধিকাংশ ফুটবল পণ্ডিত ও সাবেক ফুটবলারদের চোখেই এবার শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার জোগো বনিতোর উত্তরসূরিরাই। কিন্তু বিশ্বকাপে সবসময় যে ফেবারিট দলই জেতে এমনটিও নয়।
অপ্রত্যাশিতভাবেও শিরোপা জেতার নজির কম নয়। বরং ফেবারিট হয়ে আসর শুরু করে হতাশা নিয়ে ফেরার রেকর্ডের পাল্লাটাই ভারী। অন্তত র্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর শীর্ষ দল হয়ে খেলতে যাওয়া কারোরই নেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড।
ব্রাজিল এবার পারবে তো?
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৬:৫৫ ৯৮ বার পঠিত