আজ ১০ অক্টোবর, সোমবার বিকেলে, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে চট্রগ্রামের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের সাথে যুক্ত বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্সদের সাথে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চট্রগ্রাম বিভাগের হাসপাতালগুলির বিভিন্ন বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে চান। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “চট্রগ্রামের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ গত দুই মাসে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ভালো কাজের পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যা সামনে চলে এসেছে।
সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে অনেক টেস্টিং মেশিন কেনা হয়েছে, কিন্তু মেশিনগুলো হয় নষ্ট হয়েছে, না হয় মেশিন চালানোর লোক নেই। অনেকেই আবার ঠিকমতো অফিস করেন না। হাসপাতালে রোগীদের সাথে ভালো ব্যাবহার করা হয়না। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন নেই। সময়ের কাজ সময় মতো হচ্ছে না। এগুলো তো মেনে নেয়া যাবে না। জনগণের টাকায় এই সরকারি হাসপাতালগুলো নির্মান করা হয়েছে, তাহলে জনগণের চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি থাকে কীভাবে? কেবল ভালো ব্যাবহার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশ থেকে হাজারো মানুষ ভারত, সিংগাপুর বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। এত আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
মানুষের আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার কয়েক গুন বেড়ে গেছে। অথচ দেশেই একটু ভালো চিকিৎসা, ভালো ব্যাবহার ও মেশিনগুলোর সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে, দেশেই এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রাখা যেত। একারনেই, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গোটা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে মাঠে নেমেছি। আমরা দেখতে চাই, স্বাস্থ্যসেবার সরকারি সেবাখাতে মুল সমস্যা ঠিক কোথায় কোথায়। ভালো খবর হচ্ছে, মাঠে নামার পরই এখন আমরা সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু সমস্যাগুলো আমরা ধরতে পেরেছি, তাই সমস্যাগুলোর সমাধানও হবে।
করোনার মত এত বড় মহামারি প্রতিরোধে আমরা যদি বিশ্বে ৫ম স্থান লাভ করতে পারি, দক্ষিন এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমরা কেন ব্যর্থ হবো? মানুষের টাকায় করা হাসপাতালে মানুষই যদি সেবা ঠিকমতো না পায় তাহলে বুঝতে হবে ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো কাজ করতে পারছে না। আর, প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আপনারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে না পারলে আপনার জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে। এটি আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা। আমরা এখন দেশব্যাপী পরিদর্শনে নেমেছি। এই সময়ের মধ্যে আপনারা নিজ নিজ হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন করে ফেলুন, সেবার মান বাড়ান, যা লাগে তা নিন, লোকবল লাগে নিয়োগ দিন, বেড বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে বেড ডাবল করে নিন, কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান আপনাকে ভালো করতেই হবে। এরপর আর সুযোগ পাবেন না।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তাদের নিজ নিজ অফিসের কাজের অগ্রগতি ও সমস্যাদি নিয়ে জানতে চান এবং প্রয়োজনীয় করনীয় নিয়ে দিক নির্দেশনা দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর আগে চট্রগ্রাম বিভাগীয় হাসপাতাল অফিস পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদবোধন করেন এবং চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তিকৃত রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোকে ১০ বেড হাসপাতাল থেকে ৩১ বেডে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল ৯ অক্টোবর রাত ৮ টায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের কাজ পরিদর্শনে আসেন এবং রাতেই চট্রগ্রামের হোটেল রেডিসনের বলরুমে চট্রগ্রাম বিভাগে কর্মরত স্বাস্থ্যখাতের কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক করেন, এবং আজ সকালে চট্রগ্রাম বিভাগীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন, এবং এর পর দুপুরে চট্রগ্রামের হাঠহাজারিতে এভারকেয়ার বেসরকারি হাসপাতাল এর শুভ উদবোধন করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সফরকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম আমির খসরু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর শামিউল ইসলাম সাদীসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভায় অন্যান্যের মধ্যে চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম সহ চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহানা বেগম সহ অন্যান্য চিকিৎসক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০০:৫৬ ১৬৭ বার পঠিত