কুমিল্লার দেবীদ্বারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদের গাড়িবহরে হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় করা মামলার বাদী হয়েছেন দেবীদ্বারের বড়কামতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন।
ওই ঘটনায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেনসহ এজাহারনামীয় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে মামলা দায়ের করা হয়।
আর মামলার সাক্ষী হয়েছেন- উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
এ মামলায় আসামি হলেন আনিসুর রহমান (৪০), আমিনুল ইসলাম সুমন (৩৩), জহিরুল ইসলাম (৩৮), ওমর ফারুক (৩৬), জামিউর রহমান (২৬), আহাম্মেদ শুভ (২৪), মো. নিশান মিয়া (২৪), নুরুন্নবী (২৪)সহ আরও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জন।
তবে মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হওয়ায় তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মামলার বাদী এবং সাজানো ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তীব্র সমালোচনা করছেন।
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মী জানান, গত ৩ অক্টোবর রাতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই গ্রুপের নেতাকর্মী আহত হন। কিন্তু মামলা দায়ের করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপ। আবার সেই মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন নামে এক সাবেক ছাত্রদল নেতা। তার পুরো পরিবার বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মামলার বাদী কেন ছাত্রদল নেতা হবেন।
তাহলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের এক গ্রুপ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মূল ধারার আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে। মূলত এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে ঠেকানোর জন্যই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ একত্র হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করছেন নেতাকর্মীরা।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব রায় জানান, মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন বরকামতা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার ভাই সাকিল ছাত্রদল কর্মী। তার পিতা রফিকুল ইসলাম বিএনপির সক্রিয় কর্মী। আর এই মামলাটিও সাজানো। ওই দিন এমপি রাজী সাহেবের গাড়ি বহরেও হামলা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের দলে প্রবেশ করিয়ে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও অপপ্রচারের চেষ্টা করছে, যা সত্যিই নিন্দনীয়।
কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মেহেদী হাসান সৈকত জানান, মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ফেসবুকে পোস্ট করা বিএনপির বিভিন্ন মিছিলে তার ছবি দেখা গেছে। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যখন দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের পিতা নুরুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তখন ওই ছেলেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষের মামলার বাদী একজন ছাত্রদল নেতা ভাবতেই ঘৃণা লাগছে। এই ছেলে ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলনের সময় বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন অরাজকতায় সক্রিয় ছিলেন। সাজানো মামলায় আসামি করা হয়েছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেনসহ আরও অনেককে। মূলত এমপি রাজী মো. ফখরুলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সাজানো মামলায় আসামি করা হচ্ছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে দেখা যাবে কোনো গুলিবর্ষণ কিংবা গাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আশা করি তারা নোংরা রাজনীতির পথ ছেড়ে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবে।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি দেবীদ্বার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগে স্পষ্টভাবে বিভক্তি পরিলক্ষিত। এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার ও এ বি এম গোলাম মোস্তফা। যদিও দুই গ্রুপকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এক সারিতেই দেখা যায়। তবে তাদের মধ্যে গ্রুপিং এখন তুঙ্গে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩ অক্টোবর রাত ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার ভিংলাবাড়ি সাহাপাড়া পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে আমার গাড়িবহরে হামলা করে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন, আনিছুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম সুমনের নেতৃত্বে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। প্রতিপক্ষের এ হামলায় আমার ৫ সমর্থক আহত হন।
দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলকৃষ্ণ ধর জানান, মামলার তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৪:৩৯ ১৫৬ বার পঠিত