জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের ৫ দিনের রংপুর ও লালমনিরহাট সফর শেষে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা ফিরেছেন। এই সফরে ‘মহাজোটে নেই জাতীয় পার্টি’ এমন ঘোষণাই দিয়েছেন বারবার। পাশাপাশি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রজেক্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ হবে।
দলের ভেতর আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন জিএম কাদের। আর এটা করে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে গেলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি বিএনপির দিক থেকে।
সূত্র বলছে, জোটসঙ্গী হিসেবে জাতীয় পার্টিকে পছন্দ করছে না বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলটির শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন সাংগঠনিক সফরে রংপুরে এলেও জিএম কাদের বা জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গকেই পাত্তা দেননি তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দিনভর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির দুর্গ রংপুরে ছিলেন বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, আপাতত সরকারের পতনের আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো কথা নেই।
একইভাবে জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চাইলে বারবার এড়িয়ে যাচ্ছেন রংপুরের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। গত নির্বাচনে লালমনিরহাটের একটি আসনে দুলুকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন জিএম কাদের। দুলুর অনুসারীসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন তাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন জিএম কাদের।
তবে এবার দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসন থেকেও জিএম কাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। এরশাদের মৃত্যুর পর এই আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে এখন সংসদ সদস্য এরশাদ-রওশন দম্পতির সন্তান রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ।
অনেকের ধারণা, দেবর জিএম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান আর তাদের ঘিরে দলের ভেতরে-বাইরে নেতাকর্মীদের যে বিভক্তি ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে, তা মূলত শুরু হয়েছে জিএম কাদের যখন থেকে রংপুরের ওই আসনে নির্বাচন করার অভিলাষ প্রকাশ করেছেন।
রংপুর অঞ্চলে জাতীয় পার্টির যে অবস্থান তার কেন্দ্রবিন্দুই রংপুর মহানগরী ও সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনটি। অনেকের ধারণা, জিএম কাদেরপন্থিদের কাছে এই আসনটি নিজের কব্জায় নেয়ার পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও সমন্বয়ের হিসাবটিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
জানা গেছে, আসাদুল হাবিব দুলুকে লালমনিরহাটের আসনটি ছেড়ে দিতে জিএম কাদের তার নির্বাচনী এলাকা পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। আসাদুল হাবিব দুলু বিএনপির রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দুলুর আসন এভাবে সমন্বয় হলেও ঐক্যের ব্যাপারে বিএনপির দিক থেকে আরও জটিল কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। প্রথমত জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতার সমালোচনা ঠেকাতে গত প্রায় ১৫ বছর জাতীয় পার্টিকে পতিত স্বৈরাচারের দল বলে গালিগালাজ করে আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করে এসেছে বিএনপি। এখন সেই দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না বিএনপি তা ভালোভাবেই উপলব্ধি করছে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে কতগুলো আসন তাদের ছেড়ে দিতে হবে। জাতীয় পার্টির ভোট যুক্ত হলে বিএনপি কতগুলো আসনে কতটুকু লাভ হবে তারও চুলচেরা হিসাব বিএনপি করবে। অপরদিকে জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে গেলেও রওশনপন্থি একটি অংশ যে সরকারের সঙ্গে থেকে যাবে এটা নিশ্চিতভাবেই জানে বিএনপি। আর জাতীয় পার্টি ভেঙে গেলে লাঙ্গল প্রতীক রওশন এরশাদেরই থাকবে, সে বিষয়েও পরিষ্কার বিএনপি।
বিএনপির বিশ্বস্ত একটি সূত্র সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যের ব্যাপারে হাইকমান্ড থেকে এখনও তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে শিগগিরই জাতীয় পার্টিকে বিএনপির সঙ্গে চলমান সংলাপে বসানোর একটি প্রক্রিয়া বিএনপির শরিকদের মধ্যে আছে। আসন ভাগাভাগির আলোচনায় বসার আগে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বৃহৎ ঐক্যে শামিল হওয়ার ঘোষণাটা জিএম কাদেরের কাছ থেকে বিএনপি আগে চাইলেও জিএম কাদের অবশ্য চাইছেন আসন ভাগাভাগিসহ পরবর্তী সরকার পরিচালনায় ক্ষমতার ভাগাভাগি প্রসঙ্গে স্পষ্ট অঙ্গীকার।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:০০ ৯৫ বার পঠিত