ঢাকার রাস্তায় পথচারীদের কি কোনো অধিকার আছে?

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ঢাকার রাস্তায় পথচারীদের কি কোনো অধিকার আছে?
রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২



---

রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার প্রধান সড়কের (মিরপুর রোড) পাশে টাইলস বসিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ছাত্রাবাস সংলগ্ন এ ফুটপাতেই আবার নামানো হয়েছে পদচারী সেতুর সিঁড়ি। ফলে সেখান দিয়ে কোনো পথচারীর পক্ষে সোজা হয়ে হেঁটে যাওয়া অনেকটা অসম্ভব। হয় তাকে মূল সড়কে নেমে যেতে হবে, অন্যথায় সেতুর সিঁড়ির নিচ দিয়ে কুঁজো হয়ে তারপর ওই এলাকা পার হতে হবে।

শুধু ধানমন্ডি এলাকা নয়, রাজধানীর বাংলামোটর, পরীবাগ, মতিঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ প্রায় সব এলাকার অবস্থা একই। সেখানেও ফুটপাতের ওপর পথচারী সেতুর সিঁড়ি আর বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে চলাচলের জায়গা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

অথচ ফুটপাত হলো প্রধান সড়কের পাশাপাশি তৈরিকৃত হাঁটার পথ। সাধারণত ফুটপাতগুলো সড়কের তুলনায় একটু উঁচু করে বানানো হয় এবং সড়কের যানবানহন চলাচলের অংশ থেকে এটিকে একটি প্রতিবন্ধক দিয়ে আলাদা করা থাকে। ঠিক এমন নিয়ম মেনে রাজধানীতেও ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর সেই ফুটপাত আর মানুষের হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত থাকছে না। কোথাও কোথাও হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজনে ফুটপাত দখল করে নিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও পথচারী সেতুর সিঁড়ি আর বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে চলাচলের জায়গা প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ঢাকার ফার্মগেটে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাত কিছুদিন আগে কাটা হয়েছিল। সেটি এখন ভরাট করলেও তার ঠিক উল্টো পাশে এখন আবার কেটে রাখা হয়েছে। এতে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। শুধু এ এলাকা নয়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাটাছেঁড়া মামুলি ঘটনা।

মোটরসাইকেল পার্ক করে ফুটপাত বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে যেখানে-সেখানে। কোথাও কোথাও ফুটপাতজুড়ে গাড়ি সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় জ্যাম লাগলে ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো তো মামুলি ব্যাপার। পথচারীদের তখন দায়িত্ব হয়, পাশে সরে গিয়ে জায়গা করে দেয়া।

দখলের যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত, তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ সম্ভবত ফুটপাত। রাজধানীর প্রায় সব এলাকার সড়কের ফুটপাতই ভ্রাম্যমাণ হকারদের হাঁকডাকে সরগরম থাকে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ফুটপাত দখল করে দেয়া হয়েছে খাবার হোটেল, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, জুতার দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। কিছু কিছু জায়গায় যাত্রীছাউনি বানানো হলেও সেগুলোও দখল হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় দোকানের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ ভিক্ষুক ও টোকাইদের উপদ্রবও অতিষ্ঠ করে পথচারীদের। বেশির ভাগ এলাকায়ই দিনের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাতগুলো হকার ও ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। এলাকাভেদে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত তাদের দখলেই থাকে ফুটপাত।

ফুটপাত দখল করে দোকান ছাড়াও রাজধানীর প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ, বনানীসহ অনেক এলাকায়ই রয়েছে বাসের টিকিট কাউন্টার। এসব কাউন্টারের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না।

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কম পুঁজির কিছু মানুষ এই ফুটপাতের হাঁটার জায়গায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই ফুটপাত বন্ধ করে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এই শহরে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান বসানো যেন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বছরের পর বছর এ রকম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পথচারীদের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ফুটপাত দখল ও অবৈধ পার্কিং প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পছন্দ করতেন না। ঢাকা শহরের আর কোনো ফুটপাত কেউ দখল করে রাখতে পারবে না।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে ফুটপাতে স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করেছে। আবার এমন ঘটেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে, শেখ রাসেলের নাম দিয়েও স্কুল করে রাস্তা দখল করেছে। প্রধানমন্ত্রী এগুলো পছন্দ করেন না, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউই এসব পছন্দ করেন না। আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, এই ধরনের স্কুল আপনারা নিজের জমিতে গিয়ে করুন, জনগণের রাস্তা দখল করে এসব চলবে না।’

ধানমন্ডিতে কথা হয় পথচারী পলাশের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অফিস থেকে ফেরার পথে ফুটপাত ধরে বাসায় ফিরি। কিন্তু ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাতেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে বেশি ভোগান্তির শিকার হন পথচারীরা। বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চললেও সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ আমরা দেখি না।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার যাত্রাপথের ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ চলাফেরা ফুটপাতকেন্দ্রিক। কিন্তু রাজধানী শহরের ফুটপাতের বেহাল দশার কারণে এ চলাফেরা হয়ে উঠছে রাস্তাকেন্দ্রিক।

বিআইপির সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আখতার মাহমুদ ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য হকারদের পুনর্বাসনের ওপর জোর দিতে বলছেন। তিনি বলেন, ‘হকারদের এমন জায়গায় পুনর্বাসন করতে হবে, যেখানে সহজেই কেনাকাটা করতে মানুষ যেতে পারে। রাস্তায় হকার বসলেও ঠিক করে দিতে হবে কতজন হকার বসবেন। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনোভাবেই হকারদের জমায়েত হতে দেয়া যাবে না। ভারতের দিল্লির রাস্তায় কিন্তু হকার বসে। কিন্তু ওদের রেজিট্রেশন আছে, ঠিক করে দেয়া আছে এক রাস্তায় কতজন বসবে। এতে জটলা লাগার আশঙ্কা নেই।’

তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে আসা উচিত, কিন্তু সেটি কেন জানি পারছি না আমরা। যেভাবে বাজার গড়ে উঠছে ফুটপাতে, এটা কোনো পরিকল্পনামাফিক চলা রাজধানীর চিত্র হতে পারে না।’

নগরবিদদের মতে, হাঁটার নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি। অপর্যাপ্ত, নিম্নমানের হাঁটার অনুপযোগী ফুটপাত এবং রাস্তা পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদের আগ্রহ থাকার পরও তারা হাঁটতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১০:৩৩   ৯৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


ঝিনাইদহে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ১৫
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন অনু কাপুর
নোয়াখালীতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় চালু হচ্ছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নাসিরের ঢাকা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কমান্ডারসহ গ্রেফতার ৫
বাজারে আসছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজের ফোন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু
রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সুর মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে - খাদ্যমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা

আর্কাইভ