পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমার

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমার
শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২



---

মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর জান্তা বাহিনীর নির্বিচারে অত্যাচার-নির্যাতন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে সামরিক বাহিনীর জনসমর্থনও। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সশস্ত্রগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও যুদ্ধ করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ফলে দেশটি বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রে সাধারণত সংগঠিত বিরোধী শক্তি, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থা, বিকল্প শাসনব্যবস্থা এবং বিদেশের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়। মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধের এসব উপাদান বিদ্যমান বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের যুক্তি, বর্তমান পরিস্থিতিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিদ্রোহ বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং সফলভাবেই বার্মিজ তাতমাদো হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

নেতৃত্বে পিডিএফ

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির এনএলডির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ বাড়তে থাকে। তারই জেরে মিয়ানমারে লড়াইয়ের তীব্রতাও বেড়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জান্তাবাহিনীর নৃশংস দমনপীড়নের মুখে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে পরিণত হয়।

সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স-পিডিএফ। এরই মধ্যে গোষ্ঠীটি মিয়ানমারজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে এবং দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে। জাতীয় ঐক্য সরকার- এনইউজির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে এই পিডিএফ। সু চির এনএলডির ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের নেতৃত্বে নির্বাসিত একটি ছায়া সরকার গঠন করে দলটি। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অনেকটা কাবু করতে সক্ষম হয়েছে।

সংগঠিত বিরোধী জোট

মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্মম দমনপীড়নের কারণে ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। একইসঙ্গে তাতমাদো দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে, কারণ আগের চেয়েও অনেক বেশি বেসামরিক মানুষ লড়াইয়ের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ জনগণের প্রতি নির্বিচার সহিংসতা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে পেশাদারত্ব এবং জনসমর্থনের অভাব। সামরিক নেতৃত্ব এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিটি স্তরে দুর্নীতিও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তারা। সামরিক সরকারের ব্যর্থতা অনেক প্রভাবশালী জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনকেও এক করেছে।

মিয়ানমারে জাতিগতভাবে বিভক্ত ২৩টির বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠী সামরিক সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রাজি হলেও অধিকাংশই জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমারের পরিণতি

মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতার কারণে অসংখ্য নিরপরাধ ও বেসামরিক মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলো মিয়ানমারে নতুন করে সংঘর্ষের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির যথাযথ সমাধান না হলে, আইএস ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতার কারণে উদ্ভূত নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪১:৫২   ১০৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু
ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা জোরদার করতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান ন্যাটো প্রধানের
নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল ইসরাইল
বিশ্বে করোনায় কমেছে মৃত্যু ও শনাক্ত
ইরানে ভূমিকম্পে নিহত ৩, আহত ৩ শতাধিক
পেরুতে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৫
বিশ্বে করোনায় আরও ১০৬২ মৃত্যু, শনাক্ত বেড়েছে
কোরআন অবমাননা: সুইডেনকে সমর্থন না দেয়ার ঘোষণা তুরস্কের
ভারতের মহারাষ্ট্রে মাইক্রোবাস-ট্রাক সংঘর্ষে শিশুসহ নিহত ৯
ইউক্রেনকে ‘ভারী অস্ত্র’ সরবরাহ করতে যাচ্ছে ন্যাটো

আর্কাইভ