ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে যথারীতি আর্লিং হালান্ডের গোল, সাথে জ্যাক গ্রীলিশ ও ফিল ফোডেন আরো দুই গোল যোগ করেছেন। আর এতেই শনিবার উল্ফসের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে ৩-০ গোলে জয়ী হয়ে টেবিলের শীর্ষস্থানটি দখল করে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এটি ছিল ইংলিশ মিডফিল্ডার গ্রীলিশের এবারের আসরের প্রথম গোল। এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে শেষ ভাগে মাত্র ১৩ মিনিটে সন হেয়াং-মিনের হ্যাটট্রিকে টটেনহ্যাম ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লিস্টার সিটিকে। এর মাধ্যমে নতুন মৌসুমে গোলখরা কাটিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা।
পেপ গার্দিওলার দলের এ্যাওয়ে ম্যাচটিতে এগিয়ে যেতে মাত্র ৫৬ সেকেন্ড সময় লেগেছে। গত বছর এ্যাস্টন ভিলা থেকে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আসার পর কঠিন সময় পার করে অবশেষে কিছুটা হলেও নিজেকে স্বস্তিদায়ক জায়গা নিয়ে গেলেন গ্রীলিশ। ১৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন হালান্ড। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে গ্রীষ্মে সিটিতে আসার পর সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এটি হালান্ডের ১০ ম্যাচে ১৪তম গোল। ৩৩ মিনিটে গ্রীলিশকে ফাউলের অপরাধে সরাসরি লাল কার্ড দেখে ডিফেন্ডার ন্যাথান কলিন্স মাঠ ত্যাগ করলে উল্ফসের ম্যাচে ফিরে আসার শেষ সুযোগটিও হাতছাড়া হয়ে যায়। মিডল্যান্ডে ৬৯ মিনিটে ফোডেনের গোলে সিটির বড় জয় নিশ্চিত হয়।
এই জয়ে অপরাজিত থাকা সিটিজেনরা দুই পয়েন্টে পিছনে ফেলেছে শুরু থেকেই শীর্ষস্থানে থাকা আর্সেনালকে। যদিও আজ রোববার ব্রেন্টফোর্ডকে হারাতে পারলে আবারো আর্সেনাল হারানো স্থান ফিরে পাবে।
ম্যাচ শেষে গার্দিওলা বলেছেন, ‘দুই গোল ও এক লাল কার্ডে আমাদের ম্যাচটা দারুনভাবে শুরু হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পর আবারো লিগে ফিরে এসে এভাবে জয় সত্যিই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। জ্যাক আজ দারুন খেলেছে। চমৎকার একটি গোলও দিয়েছে। আর আর্লিং তো তার গোলের চাকা সচল রেখেছেই।’
সিটির হয়ে ২২ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান তরুণ হালান্ড টানা সাত ম্যাচে গোল করেছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে প্রথম চারটি এ্যাওয়ে ম্যাচেই তিনি গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। ছয় মৌসুমে পঞ্চমবারের মত লিগ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে সিটি এ পর্যন্ত রেকর্ড ২২টি এ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। গত মৌসুমে সর্বশেষ তারা টটেনহ্যামের কাছে পরাজিত হয়েছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে এক সপ্তাহ পুরোটাই বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবারো প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়িয়েছে। শুক্রবারের মতই শনিবারের ম্যাচগুলোতেও রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের পাশাপাশি ম্যাচের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
উত্তর লন্ডনে ফর্মহীনতায় থেকে মূল একাদশ থেকে জায়গা হারানো সন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে সমালোচকদে কড়া জবাব দিয়েছেন। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে স্পার্সদের শেষ তিনটি গোল করেন সন। এর মধ্যে দুটি ছিল দুর পাল্লার শটের গোল। দূরন্ত এই জয়ে সিটির সাথে সমান ১৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে টটেনহ্যাম। এর আগের আট ম্যাচে কোন গোল করতে না পারা সনকে কাল স্পার্স বস এন্টোনিও কন্টে বদলী বেঞ্চে রেখেছিলেন। কিন্তু মাঠে নামানোর পর কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন সন। এনিয়ে লিগে সাত ম্যাচে পঞ্চম জয় তুলে নিল টটেনহ্যাম। দলের এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সন বলেছেন, ‘এবারের মৌসুমে আমার ফিনিশিং একেবারেই ভাল হচ্ছিলনা। তবে আমি কিছুটা দূর্ভাগ্যেরও শিকার হয়েছিলাম। আমি জানতাম লেগে থাকলে গোল আসবেই, এখানে দু:শ্চিন্তার কিছু নেই।’
কন্টে বলেন, ‘আমি সনের জন্য সত্যিই দারুন খুশী। আমি তাকে বলেছিলাম তুমি যদি তিন গোল করতে পারো তবে হয়তো আবারো নতুন করে সব শুরু করবো। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে মাঠে নিজেকে প্রমান করা যেকোন খেলোয়াড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারন এর মাধ্যমে পরবর্তী ম্যাচের জন্য নিজেকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তোলা যায়।’
এদিকে এনিয়ে টানা ষষ্ঠ পরাজয় টেবিলের তলানিতে থাকা লিস্টারের কোচ ব্রেন্ডন রজার্সের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাকে সহযোগিতা না করায় দলের এই পরিনতি বলে রজার্স প্রকাশ্যে যে মন্তব্য করেছেন সে কারনে পুরো ক্লাবই তার উপর ক্ষেপে আছে।
হটস্পার স্টেডিয়ামে ৬ মিনিটে স্পট কিক থেকে লিস্টারকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ইউরি টিয়েলেমানস। কিন্তু দুই মিনিট পরেই হ্যারি কেন স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান। ২১ মিনিটে এরিক ডায়ার ব্যবধান ২-১’এ নিয়ে যান। ৪১ মিনিটে জেমস ম্যাডিসনের গোলে সমতায় ফেরে ফক্সেসরা। বিরতির পরপরই রডরিগো বেনটানকারের গোলে আবারো এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। ৫৯ মিনিটে রিচারলিসনের পরিবর্তে মাঠে নেমেই ম্যাচের ভাগ্য ঘুড়িয়ে দেন সন। ৭৩ মিনিটে দুর পাল্লার দুর্দান্ত শটে লিস্টার গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডকে পরাস্ত করেন সন। ৮৪ মিনিটে ২০ গজ দুর থেকে আবারো গোলের দেখা পান এই দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা। ৩০ বছর বয়সী সন দুই মিনিট পর নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। যদিও অফসাইড পজিশন নিশ্চিতে ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়েছিল।
সেন্ট জেমস পার্কে বোর্নমাউথের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে নিউক্যাসল। এনিয়ে সাত ম্যাচে পঞ্চম ড্র করে টেবিলের ১০ম স্থানে উঠে এসেছে নিউক্যাসল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৪:২৭ ১২১ বার পঠিত