জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ক্রিস্টিয়ান নাখটওয়াই এর আপেল বাগানে এখন ফসল তোলার মৌসুম। বাগানের গাছে থাকা লাল টুকটুকে পাকা ইলসটার আপেল তুলছেন শ্রমিকরা। খুব শিগগিরই এসব আপেল পৌঁছে যাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ফলের দোকানগুলোতে।
তবে ক্রিস্টিয়ানের আপেলের বাগানটি অন্যান্য বাগানের থেকে একটু আলাদা। কারণ আপেল ছাড়াও এই বাগানে উৎপন্ন হয় সৌর বিদ্যুৎ।
সৌর বিদ্যুতের প্যানেলগুলো বাগানের আপেল গাছগুলোর মাথার ওপর ছায়া দিচ্ছে। আপেল বিক্রির পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ বিক্রি করেও বেশ ভালো আয় হচ্ছে ক্রিস্টিয়ানের। পাশাপাশি সূর্যের অতিরিক্ত আলো থেকে বাগানের কচি গাছগুলোকে রক্ষা করতে তাপরোধী নেট কেনার খরচও বাঁচছে তার। একই সঙ্গে বিনা খরচে প্রয়োজনীয় ছায়াও পাচ্ছে তার আপেল গাছগুলো।
এ ব্যাপারে ক্রিস্টিয়ান নাখটওয়াই বলেন, আইডিয়াটা খুবই সাধারণ। কোনো ধরনের বাড়তি জায়গা নষ্ট না করেই সূর্যের কড়া তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাগানের গাছগুলো। একই সঙ্গে উৎপাদন হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎও।
জ্বালানি সংকটের এই যুগে চাষের জমিতে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানোর বিষয়টি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে। আয়ের বাড়তি উৎস হিসেবে সৌর বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারছেন কৃষকরা।
তবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফলের বাগানে ই সৌর বিদ্যুতের আবাদ বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ বাগানগুলোতে খুব সহজেই গাছগুলোর মাঝে থাকা ফাঁকা জায়গায় স্থাপন করা যায় সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।
পাশাপাশি বাগানের ফলের গাছকে সূর্যের অতিরিক্ত প্রখরতা থেকে রক্ষা করতে তাপ নিরোধী জাল ব্যবহারের খরচ থেকেও বেঁচে যাচ্ছেন কৃষকরা। কারণ সোলার প্যানেলগুলোই প্রয়োজনীয় ছায়া দিচ্ছে গাছগুলোকে।
অবশ্য কোন ধরনের ফসল ক্ষেত্র ও ফলের বাগানের জন্য কোন ধরনের সৌর প্যানেল বসানো উপযোগী সে ব্যাপারে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি সংকটের এ যুগে কৃষিক্ষেত্রে ফসলের সঙ্গ যৌথভাবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি ব্যাপক সম্ভাবনাময়। শুধু সৌর বিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করলে অপচয় হয় মূল্যবান কৃষিক্ষেত্রের। কিন্তু মিশ্র পদ্ধতিতে সৌর প্যানেল বসানো হলে কৃষিক্ষেত্রের অপচয় ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বিদ্যুৎ।
ক্রিস্টিয়ান নাখটওয়াই জানান, আপেল বাগানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই তিনি খামারের যন্ত্রপাতি পরিচালনাসহ অন্যান্য সব প্রয়োজন মেটাতে পারেন। পাশাপাশি আশপাশের ডজনখানেক বাড়িতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জার্মানির রাইনল্যান্ড প্যালাটিনেট প্রদেশের কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞ জারগেন জিমার বলেন, এ পদ্ধতিতে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানোর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এতে কৃষিজমির কোনো অপচয় হয় না।
তবে পদ্ধতিটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায় পার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে চাষের বিভিন্ন দিক বুঝতে আমাদের আরও দুই তিন বছর সময় লাগবে। এর পরই ফলনের স্বাদ গন্ধ ও মানের ব্যাপারে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন সৌর বিদ্যুতের প্যানেলের ছায়ায় উৎপন্ন ফসলের স্বাদ গন্ধ ও মান প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপন্ন ফসলের মতোই হবে।
পাশাপাশি সব ধরনের ফসলের ক্ষেত্রে সমান উপযোগী না হলেও এমন অনেক ফসল ও ফলের গাছের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপকারী, যাদের ক্ষেত্রে প্রখর সূর্যতাপ থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি ছায়ার প্রয়োজন হয়। সে সব ক্ষেত্রে এ সোলার প্যানেলগুলোই ছায়া প্রদানের কাজ ভালোভাবেই করতে সক্ষম।
বর্তমানে গবেষণা হচ্ছে কোন জাতের আপেলের বাগানের জন্য কোন ধরনের সোলার প্যানেল বেশি উপযোগী। আর এ গবেষণার জন্য ক্রিস্টিয়ান নাখটওয়াই এর বাগানটি বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
এ ব্যাপারে গবেষক জার্গেন জিমার বলেন, এ বছরের জুলাই মাসে এ অঞ্চলে রোদের প্রখরতা অন্যান্য বছরের থেকে অনেক বেশি ছিল। ফলে এখানকার অন্যান্য বাগান মালিকরা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল থাকার কারণে অনেক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ আপেল বাগানের গাছগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:১০ ১৪১ বার পঠিত